২১ শে ফেব্রুয়ারি

শফিউর রহমানের ছোট্ট একটি মেয়ে ছিলো, তিন বছরের, শাহনাজ নাম। মেয়েকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। মারা যাবার আগে যাকে হাতের কাছে পেয়েছেন তাকেই আকুতি করে বলেছেন, তাঁর মেয়েটির যেনো কোনো কষ্ট না হয়।

তাঁর জীবনের শেষ কথা ছিলো-

" আমার মেয়েটিকে তোমরা দেখে রেখো। আমি ওর কাছে আর ফিরে যেতে পারবোনা হয়তো।"

ছেলে তখন স্ত্রীর গর্ভে, সাত মাস চলছে। সন্তানের মুখও দেখে যেতে পারেননি এই মানুষটি...

.

১৯৫২-র ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটার দিকে ঢাকার রঘুনাথ দাস লেনের বাসা থেকে সাইকেলে চড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হন শফিউর। সকাল সাড়ে দশটার দিকে নওয়াবপুর রোডে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ গুলি করে...

পুলিশের গুলি শফিউর রহমানের পিঠে এসে লাগে। আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। করা হয়েছিলো অস্ত্রোপচারও। কিন্তু অস্ত্রোপচার সফল না হওয়ায় ঐদিন সন্ধ্যা সাতটায় মৃত্যুবরণ করেন মানুষটা...

.

বরকতকে যখন কাঁধে করে কয়েকজন যুবক নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনও তাঁর তলপেট দিয়ে অঝোরে রক্ত ঝরছে। সেই অবস্থায় তিনি বলেছিলেন, 

"আমি বাঁচবোনা। বিষ্ণুপ্রিয়া পুরানা পল্টনে খবর পৌছে দিয়েন।"

পুরানা পল্টনে ছিলো তাঁর মামার বাসা।

.

ভাষার জন্য প্রাণ দেয়া প্রথম শহীদ আখ্যা দেয়া হয় রফিককে। হলের বারান্দায় তাঁর লাশ পড়ে ছিলো ঘন্টার পর ঘন্টা, দেখার কেউ নেই। মাথার মধ্যে গুলি লাগে, মৃত্যুর আগে একটা শব্দ বলারও সুযোগ পাননি....

.

আবদুল জব্বার দশ বছরে পড়ালেখা ছেড়ে খেতের কাজ ধরেন, টাকার অভাবে। পনেরোতে চাকরির আশায় ছেড়েছিলেন ঘর। 


জীবনে খালি শ্রম দিয়েই গেছেন, সুখ পাননি।

ঢাকায় উঠেছিলেন মেডিকেলের ছাত্র ব্যারাকে। ছাত্রদের উত্তাল মিছিল দেখতে গিয়েছিলেন। আর ফিরে আসা হয়নি....

.

সালাম সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে ছিলেন মেডিকেলের বারান্দায়।

পুরো শহর তখন উৎকন্ঠায়!

ডাক্তার নার্সের খোঁজ নেই, কে নেয় কার খবর!


যমে মানুষে টানাটানিতে অবশেষে কদিন পর সন্ধ্যার দিকে মারা যান। জানাজার লোকও পাওয়া যায়নি। আজিমপুর কবরস্থানে তাঁর কবরও খুঁজে পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত।

.

অ থেকে চন্দ্রবিন্দু, প্রতিটা বর্ণই এক এক ফোঁটা রক্ত দিয়ে লেখা। রক্তের দাম বড় দাম। বাংলা ভাষাটা এই রক্ত দিয়ে লেখা হয়েছে, শহীদের রক্ত। তাই বাংলা ভাষা এতো পবিত্র, এতো অমূল্য।

.

বাঙালি হতে পেরে আমি গর্বিত। :)

.

আর কিছু না থাক, আমাদের একটা তারিখ আছে। :) রক্তলেখা তারিখ।

.

উননিশশো বায়ান্নো সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। :)


কৃতজ্ঞতাঃ শত্রুঘ্ন অর্পিত

Comments